বিভিন্ন কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে মেঘ জমেছে তা সরাতে চায় ভারত
- Repoter 11
- 10 Dec, 2024
বিভিন্ন কারণে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যে মেঘ জমেছে তা সরাতে চায় ভারত। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ভারত সরকারের এ বার্তা পৌঁছে দেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী। এ মেঘ সরানোর বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করা হয়েছে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও। বলা হয়েছে, স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে দুই দেশ একযোগে কাজকরবে। একই সঙ্গে ভারতে বসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবৃতি-বক্তব্য দিয়ে যে উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন, তা যে অন্তর্বর্তী সরকার চায় না, সে বিষয়েও বাংলাদেশের উদ্বেগ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কূটনীতিকদের একটি ডেলিগেশন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার পরিস্থিতি ও শ্রম অধিকার নিয়ে জানতে চেয়েছে।
দুটি বৈঠকই গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমে ইইউ ডেলিগেশন ও পরে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে যমুনার সামনে ব্রিফ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠক প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, বারবার তারা (ভারত সরকার) বলেছে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় যে সম্পর্ক এটি এগিয়ে নিতে এবং আরও জোরদার করতে আগ্রহী। পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্টে (বাংলাদেশে) যে বিপ্লব হয়েছে, সেটি তারা (ভারত সরকার) মনিটর করেছেন, তারা দেখেছেন এবং তারা এ বিষয়ে অবগত। ভারতে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে এমনটি জানিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী যিনি ওখানে (দিল্লি) আশ্রয় নিয়েছেন, সেখান থেকে কথাবার্তা বলছেন, এ কথাবার্তার মাধ্যমে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের উদ্বেগ স্পষ্টভাবে ভারতকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ উপদেষ্টা আরও বলেন, ভারতে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলেও পররাষ্ট্র সচিবকে জানানো হয়েছে। সচিব জানিয়েছেন, এ অপপ্রচারের জন্য ভারত সরকার দায়ী নয়। সরকার আসলে এগুলো করছে না এবং করানোও হচ্ছে না। তারা বলছেন, এ অপপ্রচারের জন্য দেশটির গণমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠন দায়ী।
ভারতকে ভিসা বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এখন ভিসা নিয়ে অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে ভিসা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সার্ককে শক্তিশালী করার ওপর প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলার বিষয়ে ভারত সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে রিজওয়ানা হাসান বলেন, বৈঠকে এ বিষয়ে নতুন করে কোনো আলোচনা হয়নি। সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে ভারত সরকার আগেই দুঃখ প্রকাশ করেছে। আজ যখন তারা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়া এবং জোরদার করার কথা বলছেন, কাজেই আমরা ধরে নেব, হাইকমিশনে হামলার বিষয়ে তারা যে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, এখনো সে অবস্থানেই আছেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, যে প্রপাগান্ডা চালানো হয়েছে সেগুলো সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার চেষ্টা ছিল। আমরা বলেছি, এগুলো ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে ঘটেছে। আমাদের অবস্থান স্পষ্ট- বাংলাদেশ সরকার না এ ধরনের সহিংসতা সমর্থন করছে, না এটা বরদাশত করা হচ্ছে। আমরা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছি, সহিংসতার জন্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মেঘ সরাতে ভারতের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে রিজওয়ানা হাসান বলেন, এ প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বলেছেন, বিভিন্ন কারণে আমাদের (বাংলাদেশ-ভারত) সম্পর্কের মধ্যে একটা মেঘ এসেছে। এ মেঘটা আমরাও বলেছি দূর করতে হবে, তারাও বলেছেন দূর করতে হবে। একই সঙ্গে তারা এবং আমরা একমত হয়েছি যে আমাদের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় যেমন জলবায়ু পরিবর্তন- এসব ইস্যুতেও আমাদের একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। নির্বাচনের প্রশ্নে আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে, আমাদের নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে। একটি গণতান্ত্রিক দেশের যাত্রা করার জন্য বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর।
নির্বাচন, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার নিয়ে ইইউর প্রশ্ন : রিজওয়ানা হাসান বলেন, ইইউ মানবাধিকার নিয়ে জানতে চেয়েছে; নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছে, শ্রম অধিকার নিয়ে প্রশ্ন করেছে। তার উত্তরে আমরা বলেছি, প্রতিটি বিষয়ে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। আমরা অবশ্যই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যাব।
দিল্লি থেকে ইউরোপের দেশগুলোর ভিসা সেন্টার ঢাকা অথবা অন্য কোনো দেশে সরানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের ইউরোপের ভিসা নেওয়ার জন্য দিল্লিতে যেতে হয়। এটা অনেক সময় ঝামেলা হয়ে যায়। তাদের কাছে আমাদের সুস্পষ্ট প্রস্তাব ছিল, তারা যেন ভিসা সেন্টার দিল্লি থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করে। যেহেতু বাংলাদেশে তাদের ভিসা সেন্টার নেই, এখন অনেক শিক্ষার্থী ভিসার জন্য দিল্লিতে যেতে পারছেন না।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কথা জানিয়েছি। বিভিন্ন বিষয়ে যে সংস্কার কমিশন গঠন হয়েছে সে বিষয়ে ইইউ ডেলিগেটদের অবহিত করা হয়েছে। বিশেষ করে তারা শ্রম অধিকার বিষয়ে যখন জানতে চেয়েছেন, তখন আমরা বলেছি, এ বিষয়েও একটি কমিশন হয়েছে। সবার মতামত নিয়ে শ্রম খাতে সংস্কার হবে। বিভিন্ন বিষয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, সে বিষয়টিও ইইউ কূটনীতিকদের অবহিত করা হয়েছে উল্লেখ করে পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, কেন জুলাইয়ে এ বিপ্লব হলো, এ বিপ্লবের আকাক্সক্ষা কী, সে আকাক্সক্ষা ধারণ করে জাতীয় ঐক্য গড়ার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে সে বিষয়েও তাদের জানানো হয়েছে। জুলাই-আগস্টে যে হত্যাকা হয়েছে, সে হত্যাকান্ডে র বিচারের জন্য আমরা যে ব্যবস্থা নিয়েছি সেটিও অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরও বাণিজ্যসুবিধা অব্যাহত রাখা, জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে ইইউর সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানান পরিবেশ উপদেষ্টা। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে যেসব দূতাবাস রয়েছে এর আগে শুধু সেসব দূতাবাসের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এবার ভারতে যেসব দূতাবাস রয়েছে ইইউর, সেখানকার কূটনীতিকরাও বৈঠকে অংশ নেন। এটি নতুন বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
Leave a Reply
Your email address will not be published. Required fields are marked *